স্থানীয়দের হাতে চবি ছাত্র আসাদ ভাই হত্যার ১২ বছর ও চলমান সমস্যা || আবু সাঈদ মারজান
২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের পরদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ১নং রেল ক্রসিং এলাকায় খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ ভাই। ২০১০ সালের ১৫ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চবি রেল ক্রসিং এলাকায় আসাদ ভাই ও তার দুই বন্ধু আড্ডা দেয়ার সময় তাদের সাথে শার্ট ও লুঙ্গি পড়া কয়েকজন এলাকাবাসীর কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় হাতে লাঠি, দা, ছোরা নিয়ে আরো কয়েকজন এলাকাবাসী এসে তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এতে দর্শন প্রথম বর্ষের ছাত্র মোয়াজ্জেম হোসেন জেমস ভাই ও রসায়ন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মীর হোসেন মিরাস ভাই আহত অবস্থায় পালিয়ে চলে আসলেও হামলাকারীরা আসাদ ভাইকে আটকে ফেলে। এরপর রাত সাড়ে এগারটার দিকে শাহী মঞ্জিলের পাশ থেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে দায়ের কোপসহ মুমূর্ষু অবস্থায় আসাদ ভাই কে উদ্ধার করে চবি মেডিকেলে নেয়ার পর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রায় ১১ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে পরদিন শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু ঘটে।
আসাদ ভাই হত্যাকান্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মোয়াজ্জেম হোসেন জেমস ভাই ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ১২জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করেছিলেন। ১৭ দিন পর পুলিশ তখন এই মামলার চার্জশিট দিলেও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
আসাদ ভাই হত্যাকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-আমীন। উনি ওই হত্যাকাণ্ডের খুনীদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি প্রতিবেদনে করা কোন সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি আজ পর্যন্ত।
হয়ত ওই হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ার কারনেই চবি ক্যাম্পাসের আশেপাশের মানুষেরা বুঝে গেছে যে চবি যেখানে ছাত্র হত্যার বিচারই করতে পারে নাই গায়ে হাত তুললে কি আর করবে?
এমনও হতে পারে ওই হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ার কারনেই বর্তমানে চবির ছাত্ররা বারবার ভিকটিম হচ্ছে। হয়ত কোন একটা সিন্ডিকেট বিশেষ স্বার্থ হাসিলের জন্য হয়ত এসব ঝামেলার সৃষ্টি করে।
চবি প্রসাশনের কাছে অনুরোধ আপনারা এসব সিন্ডিকেটকে খুজে বের করুন। এসব সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করতে পারলেই হয়ত বর্তমান সময়ে এসব ঝামেলা কেন হচ্ছে তার কারন খুজে পাওয়া যাবে।
আমরা যারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চবি ক্যাম্পাসে পড়ালেখা করতে আসছি আমরা কেউ ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকার মানুষের জাত শত্রু না। আমরা একে অপরের পরিপূরক ।
এই ক্যাম্পাসে চাকুরি করে এমন অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারী, অফিসার ও শিক্ষক আছে যাদের বাড়ী ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকায়। এই ক্যাম্পাসের অনেক ছাত্র ভাই বোনেরা আছে যারা ক্যাম্পাসের আশে পাশের মেস/কটেজে থেকে পড়ালেখা করে। আমরা চবির ছাত্ররা যেমন এলাকা ছাড়া চলতে পারবো না। অনেক ক্ষেত্রে আশেপাশের এলাকার লোকজনও ক্যাম্পাসের উপর ডিপেন্ডেন্ট ।
তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন আপনারা আসাদ ভাই হত্যা সহ বিগত দিনের সকল ঝামেলা ও বর্তমান সময়ে আমাদের ভাই বোনদের যারা আহত করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনেন। তাহলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
যদি কেউ বা কারা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা গুলার সূত্রপাত করে থাকে বিগত দিনের ঘটনা গুলোর বিচার হলেই তাদের মুখোশ উন্মচোন হয়ে যাবে।
কেউ/কারা বা কোন সিন্ডিকেট এমন ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে এই কথা এই জন্যই মনে আসে তার কারন, যখন কোন সি এন জি ড্রাইভারের সাথে কথা কাটাকাটি হয় তখন মেক্সিমাম ঝামেলায় এলাকার অপরিচিত কিছু লোক কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই কাহিনি না যেনেই হামলা করে বসে। যা দেখে মনে হয় ঘটনার পিছনে কোন ঘটনা থাকতে পারে।
আসাদ ভাই হত্যাকান্ডের পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ আল আমীন স্যার তখন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আসাদ হত্যার আসামিদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম।কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের থাক প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেটসহ কোন পর্ষদেই উত্থাপন করা হয়নি।
বিগত দিনের এসব সকল ঝামেলার বিচার হলেই কিছু সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করি।
আর ২০১৪ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ভিতর যে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু ছিলো সেটাও পুনরায় চালু করলে সি এন জি এর উপর ডিপেন্ডেন্সি অনেক কমবে। তখন যেসব অল্প কিছু সি এন জি ক্যাম্পাসের রোডে চলবে ওই সকল সি এন জি এর মালিকের ডকুমেন্টস, সি এন জি এর লাইসেন্স, ড্রাইভার এর ড্রাইভিং লাইসেন্স , ড্রাইভার এর এন আই ডি সহ ড্রাইভার যে সি এন জি চালাবে তার সকল ডকুমেন্টস এর ফটোকপি প্রশাসনের কাছে জমা রেখে তারপর পারমিশন দিলে সি এন জি ড্রাইভারদের সাথে ঝামেলা অনেকটা কমবে বলে আমি মনে করি।
আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত চলমান সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান করে চবির ছাত্র ভাই বোনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
আবু সাঈদ মারজান
সাবেক আইন সম্পাদক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।